আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু দমকল, দমকল শব্দের অর্থ, দমকল বাহিনী কে ইংরেজি তে কি বলা হয় আর জানব একজন দমকল কর্মীর যোগ্যতা, গুনাগুন, ছুঁটি-ছাঁটা ইত্যাদি।
দমকল কী
দমকল একটি বাংলা শব্দ। বাংলাভাষী না হলে সচরাচর দমকল শব্দটি শোনা যায় না। ইংরেজিতে যাহাই ফায়ার ব্রিগেড, বাংলায় তাহাই দমকল নামে পরিচিত। দমকল বিভাগের মূল কাজ আগুন নেভানো। ফায়ার সার্ভিসের দমকল নাম কেন জানার জন্য পড়ুন।
দমকল কর্মী বলতে কি বোঝ
দমকল বাহিনী বা ফায়ার ব্রিগেডে কর্মরত কর্মীদের দমকলকর্মী বলে। ভাষা ও জায়গা অনুসারে দমকল কর্মীরা বিভিন্ন নামে পরিচিত। কোথাও তাদের ফায়ারম্যান ( Fireman) বলে তো কোথাও আবার ফায়ার ফাইটার্স (Fire Fighters), আবার হিন্দিভাষী মানুষেরা তো অগ্নিশামক দল (Agni Shaamak Dal) বলে ডাকে।
যে নামেই ডাকা হোক না কেন কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে তাদের কোনো পার্থক্য নেই।দমকল বাহিনীর কাজ
একজন দমকলকর্মীর প্রাথমিক কাজ আগুন নেভানো। তাছাড়া জীবন রক্ষা ও সম্পত্তি আগুন থেকে বাঁচানো এগুলিও তাদের কাজের মধ্যে পরে। চাকরিতে নিযুক্ত হওয়ার সময় থেকে ট্রেনিং চলাকালীন কিভাবে আগুন নেভানো ও জীবন বাঁচানো যায় তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
আপনার নিকটবর্তী দমকল কেন্দ্র এর নাম ও ফোন নম্বর জেনে নিন।
তাছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে যখন বিঘ্ন ঘটে তখন তা স্বাভাবিক করার জন্য দমকল বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হয়। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ ও পশু পাখি যখন কোন উঁচু জায়গায় আটকে পরে তখন তাদের সুরক্ষিত ভাবে নিচে নামানোর জন্যও দমকলের সাহায্য নেওয়া হয়।
দমকলের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন।
দমকল কর্মীর ছুঁটি-ছাঁটা
দমকল একটি জরুরী পরিষেবা। এই দপ্তরের রবিবার বা অন্যান্য ছুটির দিন বলে কোন বিশেষ দিন হয়না। কারন বিপর্যয় হোক কিংবা দুর্ঘটনা কখনো বলে আসেনা, তাই দমকল কর্মীদের সবসময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। পুলিশ, ডাক্তার ও অন্যান্য জরুরি বিভাগের মত এই দপ্তরের কর্মীদের সমানভাবে কাজ করতে হয়। এটা বলাবাহুল্য দমকল ও অন্যান্য জরুরী বিভাগের কর্মীরা ছুঁটির দিনে কাজ করে বলে আমারা নির্ভয়ে ছুঁটি কাটাতে পারি।
দমকল কর্মীদের গুনাগুন
প্রত্যেক দমকল কর্মী নিয়োগের সময় অন্যান্য পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা ও ডাক্তারি পরীক্ষা হয়ে থাকে। শারীরিক পরীক্ষার সময় যেমন শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা নেওয়া হয়। তেমনি ডাক্তারি পরীক্ষার সময় তাদের চোখ, কান নাক ইত্যাদির পরীক্ষা করা হয়।
এই সমস্ত পরীক্ষা দপ্তরে নিয়োগের জন্য খুবই কার্যকরী। কারণ একজন দমকল কর্মীকে উদ্ধারকার্যও করতে হয়। সে যদি নিজে শারীরিকভাবে দুর্বল হয় তাহলে সে অপরজনকে কিভাবে উদ্ধার করবে।
একজন দমকলকর্মীর গুনাগুনের মধ্যে সর্বপ্রথম উপস্থিত বুদ্ধি বা Presence of mind থাকা খুবই জরুরী। কারণ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যেমন এই দপ্তরের কোন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে তেমনি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিও অনেকটা কমানো যেতে পারে।
কোথা থেকে কিভাবে জল দিলে আগুন ছড়াবে না, কোন পদ্ধতিতে উদ্ধারকার্য করলে কম সময়ে বেশি মানুষকে সুরক্ষিত করা যাবে, এইসব এক উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অতএব দমকলে উপস্থিত বুদ্ধি থাকা খুবই জরুরী।
দমকলে নিয়োগ হওয়ার সঠিক বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা
প্রত্যেক সার্ভিসে যোগ দেওয়ার যেমন একটি নির্দিষ্ট বয়স থাকে তেমনি দমকল বিভাগে যোগ দেওয়ার বয়স ১৮ বছর থেকে ২৭ বছর। ১৮ বছর থেকে ২৭ বছরের ছেলে ও মেয়েরা দমকল বিভাগে যোগ দিতে পারে। তবে পশ্চিমবঙ্গ দমকল বিভাগে এখনো পর্যন্ত মহিলা দমকল কর্মীর নিয়োগ হয়নি।
দমকল (পশ্চিমবঙ্গ) বিভাগে যোগ দেবার নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাশ। যদি কোনো পরীক্ষার্থী মাধ্যমিকের পর বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করে থাকেন তাহলে পরবর্তীকালে চাকরির পদোন্নতিতে সুবিধা হয়।
দমকল কর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন
উন্নত দেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গ দমকল বাহিনীর তুলনা
অন্যান্য দেশের ফায়ার সার্ভিসের সাথে পশ্চিমবঙ্গ ফায়ার ব্রিগেডের পার্থক্য আলোচনা করতে হলে প্রথমে যার কথা বলতে হয় তা হলো ফায়ার সেফটি। বিদেশে কর্মী সুরক্ষার জন্য যে ধরনের আধুনিক Suite ও Equipments দেওয়া হয় তা ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে চোখে পড়েনা। Personal Protective Equipment (PPE) নামমাত্র আছে, তাও লোক দেখানো বললেই চলে। কারন কর্মীপিছু PPE প্রদান করা হয় না।
বিদেশে একজন ফায়ারফাইটার্স কাজ করতে গিয়ে জীবনহানি ঘটলে তাকে শহীদের সম্মানে সম্মানিত করা হয়। কিন্ত পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি নিউজ চ্যানেল ছাড়া দমকলকর্মীর মৃত্যুর খবর তেমন একটা শোনা যায় না।
সঠিক পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ দমকল বিভাগে। যেখানে বেদেশি ফায়ার ফাইটার্সরা তুলনামূলক ভালোই প্রশিক্ষিত।
বিদেশে ফায়ার ফাইটার্স এর মৃত্যুর পর সরকার থেকে এক মোটা পরিমাণ অর্থ রাশি তার পরিবারকে প্রদান করা হয়, তাছাড়া থাকে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। যার ফলে তারা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ফায়ার ব্রিগেডে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়। পশ্চিমবঙ্গ দমকল বাহিনীতে কর্মরত কর্মীদের সব থেকে বড় চিন্তার বিষয় তাদের মৃত্যুর পর তাদের পরিবারের কি হবে?
আশাকরি রাজ্যের উন্নতির সাথে সাথে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দমকল মন্ত্রী ও দমকল বিভাগের ডিজি দমকলকর্মী দের এই দুশ্চিন্তার ব্যাপার টি গুরুত্বসহ কারে দেখবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ