সিপিআর কাকে বলে - সিপিআর দেওয়ার নিয়ম

আজকের আলোচ্য বিষয় সিপিআর কি (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন), সিপিআর এর পুরো অর্থ, সিপিআর দেওয়ার নিয়ম, সিপিআর দেওয়ার অনুপাত, সিপিআর দেওয়ার আগের পরীীক্ষাসমুহ , প্রাপ্তবয়স্ক ও বাচ্চাদের সিপিআর দেওয়ার নিয়ম।

পূর্বে আমরা জেনেছি ফায়ার এক্সটিংগুইশার (Fire Extinguisher) সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য। তারপর জেনেছি বিএ সেট (BA Set) এর ব্যাপারে। আজকে জানবো সিপিআর (CPR) সম্বন্ধে। ফায়ার ব্রিগেডে বিপরীত পরিস্থিতিতে বিএ সেট পড়ে যখন কাউকে উদ্ধার করা হয়। তখন প্রথমে একজন ফায়ারফাইটার কে দেখতে হয় ব্যক্তিটি জ্ঞান অবস্থায় আছে না অজ্ঞান অবস্থায়।

তার সিপিআর এর দরকার আছে কি নেই? তার এই সিদ্ধান্ত একজন মৃতপ্রায় ব্যক্তির প্রাণ ফেরাতে পারে। নিম্নে বিস্তারিত জানব।


সিপিআর কি


সিপিআর কাকে বলে (What is CPR)


সিপিআর কি - কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার প্রক্রিয়াকে CPR বলে। সিপিআর এর পুরো অর্থ (Cardio Pulmonary Resuscitation) কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন। এটি First-aid এর একটি অঙ্গ। সিপিআর কে BLS নামেও জেনে থাকি যার পুরো অর্থ (Basic Life Support) বেসিক লাইফ সাপোর্ট। এটি একটি ইমারজেন্সি life-saving প্রসিডিউর। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন ও শ্বাসপ্রশ্বাস পুনরুদ্ধারের একটি চিকিৎসা পদ্ধতি।

সিপিআর কি জানার পর এবার জানা যাক CPR দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।


সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ

সিপিআর এমন একটি প্রাথমিক চিকিৎসা, সঠিক সময় সঠিক নিয়মে (যা আমরা পড়ে জানবো) যদি সিপিআর দেওয়া হয় তাহলে একটি মৃতপ্রায় ব্যক্তির জীবনও ফেরানো যেতে পারে। ফায়ার ব্রীগেডের এর কর্মীদের BA set এর ব্যবহার জানা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি CPR সম্বন্ধেও জানা খুবই জরুরী।


CPR সম্বন্ধে জানা যে শুধুমাত্র Fire brigade এর কর্মীদেরই জরুরি তেমনটি নয়। কারণ খারাপ সময় কখনো বলে আসেনা। তাই আপনি যদি সাধারন মানুষও হয়ে থাকেন জেনে রাখুন।


ভারতের মতো দেশে হঠাৎ করে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে যায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষের যথেষ্ট অভাব আছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পদ্ধতি যদি আপনার জানা থাকে স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াই আপনি বাঁচাতে পারেন একটি জীবন।


তার জন্য অবশ্যই সঠিক পদ্ধতি জানতে হবে ...

এবার জানা যাক CPR কাদের কে দেওয়া হয়।


সিপিআর পদ্ধতি (CPR procedure)

যখন কোন মানুষের কোন কারণবশত শ্বাস (Breathe) নিতে সমস্যা হয় তখন আমরা সিপিআর দিয়ে থাকি।

যেমন ....
  1. জলে ডুবে যাওয়া
  2. ইলেকট্রিক শক লাগা
  3. রাস্তায় দুর্ঘটনা গ্রস্ত কোন ব্যক্তি
  4. খাদ্যনালীতে খাবার আটকে যাওয়া কোন ব্যক্তি
  5. আগুন লাগার ফলে অতিরিক্ত ধোঁয়া পেটে চলে যাওয়া
  6. Stroke হওয়া কোনো ব্যক্তি ইত্যাদি।
এবার জানা যাক সিপিআর দেবার আগে আমাদের কি চেক করার প্রয়োজন আছে !
 

সিপিআর দেওয়ার নিয়ম (How to perform CPR)

এমনটি নয় ব্যক্তি জলে ডুবে গেছে বা ইলেকট্রিক শক লেগেছে বা স্ট্রোক হয়েছে আমার সবাইকে সিপিআর দেবো। তেমনটা একদমই নয়। CPR দেওয়ার পূর্বে আমাদের বেশ কিছু জিনিস চেক করতে হবে, তারপরেই সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে তাকে CPR দেওয়া উচিত হবে কিনা? বা তার আদও সিপিআর এর প্রয়োজন আছে কিনা? তার জন্য যেটা করতে হবে..


সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দেওয়ার আগের পরীীক্ষাসমুহ

CPR দেওয়ার পদ্ধতি  প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এক এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আর এক। নিম্নে বিস্তারিত জানব।

প্রাপ্তবয়স্ক দের সিপিআর দেওয়ার নিয়ম

প্রথমত দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান আছে কিনা। তার জন্য ব্যক্তির সাথে কথা বলুন। ব্যক্তি যদি কথা না বলে। তারপর আলতো করে ধাক্কা দিন বা স্পর্শ করুন। তাতেও যদি সাড়া না দেয়।


আক্রান্ত ব্যক্তির নাকের সামনে আঙুল নিয়ে যান এবং দেখুন ব্যক্তিটির শ্বাস-প্রশ্বাস উপলব্ধি হচ্ছে কিনা?


যদি শ্বাস-প্রশ্বাস উপলব্ধি না হয় তাহলে, আপনার কানটি আক্রান্ত ব্যক্তির নাকের সামনে নিয়ে যান এবং দেখুন শ্বাস প্রশ্বাসের কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে কিনা?

সিপিআর
CPR Test

যদি কোন শব্দ না শোনা যায় তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির pulse চেক করতে হবে এবং দেখতে হবে ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডে pulse অনুভূতি হচ্ছে কিনা? বয়স অনুসারে পালস চেক করার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। Adult বা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে Carotid pulse ও Child বা শিশুদের ক্ষেত্রে Brachial pulse সহজে অনুভূতি হয়।


Carotid pulse location: ঘাড়ের সামনে বা গলার দুপাশে চোয়ালের কোন বরাবর ঠিক নিচে। 
সিপিআর টেস্ট
বড়দের ক্ষেত্রে এই ভাবে দেখতে হবে

Brachial pulse location: অভ্যন্তরীণ হাত,  কনুই ও কাঁধের মাঝ বরাবর  ।
কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন টেস্ট
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই ভাবে দেখতে হবে


ছবিতে ঠিক যে ভাবে দেখানো হয়েছে সেই ভাবে pulse চেক করতে হবে।


সিপিআর স্টেপস (CPR Steps)

সিপিআর পজিশন  : যদি দেখেন তাতেও পালস অনুভূতি হচ্ছে না। তা হলে তাৎক্ষণিক চেস্ট কম্প্রেশন (chest compression) শুরু করতে হবে। তার জন্য প্রথমে যেটা জরুরী, আক্রান্ত ব্যক্তিকে একটি সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যান। সুরক্ষিত কথার অর্থ যেখানে উপর থেকে কিছু ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা না থাকে এবং বাতাসে যেন কোন দুষিত গ্যাস বা ধোঁয়া না থাকে। ব্যক্তি কে চিৎ করে সমতল ভূমিতে শুইয়ে দিন। 


তার আগে Emergency help line number এ ফোন করে ambulance পাঠানর কথা বলুন।
এরপর যতক্ষণ না ambulance আসছে ততক্ষণ CPR চালু রাখুন। Cpr দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে যা নিম্নে আলোচনা করা হল।


সিপিআর দেওয়ার কয়েকটি ধাপ (Steps of CPR)

  • আক্রান্ত ব্যক্তি যদি Tie বা belt পরে থাকে সেটি খুলে দিন বা আলগা করে দিন।
  • জামার উপরের বোতাম খুলে দিন।

Step-1 : তারপর মাথাটা কাত করুন (Head tilt) ও থুতনিটা (Chin lift) উপরের দিকে করুন।

সিপিআর দেওয়ার নিয়ম
CPR Steps


Step-2: এইরকম অবস্থায় আপনার ডান হাতটা বাঁ হাতের উপর বা বাঁ হাতটা ডান হাতের উপর ছবির অনুরূপ করুন।

সিপিআর দেওয়ার নিয়ম ২
CPR Steps 2

Step-3: তারপর হাতটি ওই অবস্থায় বুকের দুই স্তনবৃন্তের মাঝ বরাবর রাখুন। উদ্ধারকারীর বা আপনার হাত যেন সোজা থাকে। কোনো ভাবেই হাত ভাঁজ হলে চলবে না।

সিপিআর দেওয়ার নিয়ম ৩
CPR Steps 3

Step-4: এই ভাবে ৩০ বার  বুকে চাপ (chest compression) দিন। মনে রাখতে হবে চাপটি যেন দ্রুত ও শক্ত হয়। শক্ত কথার অর্থ যখন বুকে চাপ দেবেন, হাতের pressure এ বুকটি যেন ২ ইঞ্চি নিচে নামে।

সিপিআর দেওয়ার নিয়ম ৪
CPR Steps 4


Step-5: ৩০ বার  বুকে চাপ দেওয়ার পর আক্রান্ত ব্যক্তির নাক টিপে ধরে মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে (Mouth to Mouth) ফুঁ (Breathe) দেবেন। যেমন বেলুনে হাওয়া ভরা হয়।

সিপিআর দেওয়ার নিয়ম ৫
CPR Steps 5

ফুঁ (breathe) ২ বার দিতে হবে ১ সেকেন্ড ধরে। Breathe দেওয়ার সময় নজর রাখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির পেটের দিকে। প্রত্যেক breathe এ পেট যেন ফুঁ দেওয়ার সাথে সাথে উপরের দিকে ওঠে।


 শিশুদের সিপিআর দেওয়ার নিয়ম (How to perform CPR on a child)

শিশু র ক্ষেত্রে সিপিআর দেওয়ার নিয়ম  টা একটু আলাদা । 

শিশু র সাথে কথা বলুন, পায়ের তলায় আলতো করে টোকা দিন। Pulse চেক করুন উপরের দেওয়া ছবির মত।  যদি শিশুটি কোনো সাড়া না দেয় তাহলে সিপিআর শুরু করুন। 

সিপিআর ৩


আপনার হাতের দুটি  আঙ্গুল ছবির অনুরূপ করুন এবং শিশুর বুকের স্তনবৃন্তের মাঝ বরাবর রাখুন। তারপর ৩০ টি চেষ্ট কমপ্রেশন (chest compression ) দিন ২-টি ফু (breathe) দিন। 
ফু দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর পেটটা যেন উপরের দিকে ওঠে। মনে রাখতে হবে ফু দেওয়ার সময় শিশুর মুখ ও নাক আপনার মুখ দ্বারা যেন ঢাকা থাকে ।


চেষ্ট কমপ্রেশন হার্ড ও ফাস্ট হওয়া দরকার। হার্ড কথার অর্থ আঙ্গুল যেন ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি নিচে নামে। ফাস্ট কথার অর্থ প্রতি সেকেন্ডে ২ টি চেষ্ট কমপ্রেশন।


সিপিআর দেওয়ার অনুপাত (CPR ratio)

 ৩০:২ (compression:breathe) অনুপাতে এই প্রক্রিয়াটি ক্রমাগত করতে থাকতে হবে যতক্ষণ না এম্বুলেন্স আসে। মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার দিতে হবে। এই ভাবে সঠিক পদ্ধতি জানা থাকলে একটি মৃতপ্রায় ব্যক্তির জীবন ফেরান জেতে পারে।


Post a Comment

আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ

নবীনতর পূর্বতন